বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : আহমদ ছফা। যদিও তাঁর সম্পর্কে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই, তবুও ৩০ জুন এই খ্যাতিমান লেখক, ঔপন্যাসিক, চিন্তাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৪৩ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
মীর মশাররফ হোসেনকে বাদ দিলে কাজী নজরুল ইসলাম-পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে। আহমদ ছফার লেখায় বাংলাদেশি জাতিসত্তার পরিচয়-নির্ধারণ প্রাধান্য পেয়েছে।
আহমদ ছফা সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্প, গান, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনি মিলিয়ে ৩০টির বেশি গ্রন্থ রয়েছে তাঁর।
১৯৬৭ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য তুমি সাথী’ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হলো; ওঙ্কার (১৯৭৫), বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৮১), একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন (১৯৮৮), অলাতচক্র (১৯৯৩), গাভী বিত্তান্ত (১৯৯৫), অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (১৯৯৬), পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ (১৯৯৬), ফাউস্ট (১৯৮৬), যদ্যপি আমার গুরু (১৯৯৮) ইত্যাদি।
আহমদ ছফা রচিত প্রতিটি উপন্যাসই ভাষিক সৌকর্য, বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীর অভিনবত্বে অনন্য। মানসিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থসামাজিক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুষঙ্গসহ ছফার চরিত্র সৃষ্টির তথা কাহিনিকথনের পারঙ্গমতা অসামান্য।
অনেকের মতে তাঁর ‘ওঙ্কার’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বোত্তম সাহিত্যিক বহিঃপ্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতির প্রেক্ষিতে রচিত ‘গাভী বিত্তান্ত’ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাসগুলোর একটি। ‘পুষ্প বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ’-এ ছফা ঢাকা শহরের প্রেক্ষিতে ফুল, পাখি, বৃক্ষ তথা বৃহৎ প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের এক নিজস্ব বয়ান হাজির করেন।
আহমদ ছফা ও তাঁর রচনাকর্ম অনেক লেখক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকর, ও বুদ্ধিজীবীকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি সর্বসাম্প্রতিক বাংলাদেশের সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী বলে বিবেচিত।
জীবিতকালে আহমদ ছফা তাঁর প্রথাবিরোধিতা, স্পষ্টবাদিতা, স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গির জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবীমহলে বিশেষ আলোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন। জীবদ্দশায় অনেকে তাঁকে বিদ্রোহী, বোহেমিয়ান, উদ্ধত, প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাহীন ও বিতর্কপ্রবণ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রতিষ্ঠানবিরোধী আহমদ ছফা ১৯৭৫ সালে লেখক শিবির পুরস্কার ও ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমির সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সাহিত্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।
২০০১ সালের ২৮ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ৩০ জুন সকাল ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা সম্মেলন’-এর আয়োজন করেছে আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা। সম্মেলনে তাঁর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা ও স্মৃতিচারণা করার পাশাপাশি তার রচিত কবিতা আবৃত্তি করা হবে।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন ।